
প্রকাশিত: Wed, Dec 7, 2022 9:08 PM আপডেট: Wed, Apr 30, 2025 12:44 AM
স্বপ্নবাজ এক মেয়র ছিলেন আনিসুল হক
শরিফুল হাসান: প্রিয় মেয়র আনিসুল হক। দেখতে দেখতে ৫ বছর হয়ে গেলো আপনি নেই এই শহরে। আপনি নেই আপনার প্রিয় এই ঢাকা নগরীতে যেই নগরের মেয়র হিসেবে আপনি আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে চিনতাম বলেই বলতে দ্বিধা নেই, এই দেশে, এই শহরে যোগ্য নেতার যেখানে বড্ড অভাব, সেখানে আপনি এসেছিলেন আশার আলো নিয়ে। ঢাকা নিয়ে কতো কতো স্বপ্ন ছিলো আপনার। যানজট কিংবা নাগরিক যেকোনো সংকটের কথা ভাবি, আপনার কথা মনে পড়ে। প্রিয় মেয়র আপনাকে আমরা কিন্তু নানাভাবে চিনি। বিশেষ করে আমরা আমাদের শৈশবে আপনাকে চিনেছি একজন দারুণ উপস্থাপক হিসেবে। কী দারুণ করে কথা বলতেন আপনি। আপনার উপস্থাপনায় ‘আনন্দমেলা’ ও ‘অন্তরালে’ অনুষ্ঠানগুলো দেখেছিলাম। বিশেষ করে জলসা অনুষ্ঠানটা আমার স্মৃতিতে এখনো দাগ কেটে আছে।
সালটা ১৯৯৫। আমাদের তখন কিশোর বয়স। স্কুলে পড়ি। সবে ব্যাণ্ডের গান শুনতে শুরু করেছি। সেই সময় বিটিভিতে দেখলাম ব্যতিক্রমী সংগীত বিষয়ক সেই অনুষ্ঠানটা। ব্যাণ্ড সঙ্গীতকে তখনো খুব ভালো চোখে দেখেন না আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠরা। আপনি সেই সময়ে অসাধারণ সেই অনুষ্ঠানটা করলেন। আমার আজও মনে আছে, ক্লাসিকাল বনাম ব্যান্ডসঙ্গীত, চিরকালীন এই দ্বন্দ্ব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছিল সেই অনুষ্ঠানে। এরপর ক্লাসিকাল শিল্পীরা গাইলেন ব্যান্ডের গান, আর ব্যান্ড শিল্পীরা গাইলেন রবীন্দ্রসংগীত। আধুনিক গানের শিল্পীরা গাইলেন নজরুল সঙ্গীত এবং গানের সঙ্গে অর্থনৈতিক-সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব সব কিছু নিয়ে প্রবীন ও নবীনদের খোলামেলা আলোচনা। আমি এখনো মাঝে মধ্যে মন খারাপ হলে ইউটিউবে সেই অনুষ্ঠান দেখি। ২০০০ সালের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে সাংবাদিকতায় যুক্ত হলাম। আপনাকে তখন দেখলাম বিজিএমইর নেতা হিসেবে। আশির দশকে এই বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের যে শুরু তাতে আপনিও ছিলেন শুরুর দিকেই। ১৯৮৬ সালে আনিসুল হকের নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘মোহাম্মদী গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা হলো। তৈরি পোশাক, বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, আবাসনসহ নানা খাতে কাজ করলেন আপনি। ২০০৫ থেকে ২০০৬ সাল এই সময়ে আপনি ছিলেন বিজিএমই-এর সভাপতি। ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ছিলেন সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি। প্রিয় আনিসুল হক আপনি যখন ব্যবসায়িক নানা সংগঠনের নেতা সেই সময়ে সাংবাদিক হিসেবে আপনাকে দেখেছি। মনেই হতো না ব্যবসায়ী এই মানুষটা শিল্প সঙ্গীতও দারুণ বোঝেন। এরপর আপনি এলেন রাজনীতিবিদ হিসেবে। অপনি এলেন এই শহরের ত্রাতা হিসেবে।
২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আপনি প্রার্থী। দারুণ লাগলো ঢাকা নিয়ে অপনার দারুণ সব স্বপ্ন। এরপর মেয়র হলেন। তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যাণ্ডকে দখলমুক্ত করতে আপনার সাহসী লড়াইয়ের কথা এই শহরের মানুষ বহু বছর মনে রাখবে। মেয়র হিসেবে আপনি যে স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছিলেন সেটি আমার আজীবন মনে রাখবো। প্রিয় অনিসুল হক আমার একটা অনুশোচনা আছে। ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আপনি মেয়র হলেন। আপনার মেয়র হিসেবে এক বছর পুর্তিতে একটা লাইভ আলোচনা ছিলো এটিএন নিউজে। সেই অনুষ্ঠানে সাংবাদিক হিসেবে আপনার মুখোমুখি ছিলাম আমি। সেই অনুষ্ঠানে মেয়র হিসেবে আপনার প্রশংসার পাশাপাশি কিছু কাজ করতে না পারার কারণে সমালোচনা করেছিলাম। আপনি তখন বলছিলেন কেনো কী কারণে বাকি কাজগুলো হচ্ছে না। অমি বলেছিলাম, আপনি না পারলে আর কে পারবে?
সেদিনের অনুষ্ঠান শেষে আপনি আমার কাঁধে হাত রেখে বলেছিলেন, শরিফুল আমাকে আরেকটু সময় দাও। আমি বলেছিলাম, মাননীয় মেয়র আপনার প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে। আপনি না পারলে আর কে পারবে এই শহরকে বাসযোগ্য করতে? কিন্তু আফসোস সেই সময়টা আপনি আর পেলেন না। কিছুদিন পরেই শুনি আপনি অসুস্থ। এরপর নানা গুজব। ২০১৭ সালের আজকের দিনে আপনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। চলে গেলেন এই শহরকে এতিম করে। প্রিয় মেয়র দোয়া করি আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করুন। আপনার জন্য শুধু একটা কথাই বলি, স্বপ্নবাজ এক মেয়র হিসেবে, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে, একজন সৃজনশীল মানুষ হিসেবে আপনাকে মনে রাখবো বহুদিন। আফসোস আপনি নেই তাই শহরটাও ভালো নেই। ৩০ নভেম্বর প্রয়াণ দিবস, অনেকে অনেক ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রিয় মেয়র আনিসুল হক। লেখক: অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান, ব্র্যাক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
